নিজস্ব প্রতিবেদক: আবার বাড়ছে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের দাম। আজ শনিবার থেকে প্রতি সিলিন্ডারে ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি হতে পারে বলে পরিবেশকদের সূত্রে জানা গেছে। এ নিত্যপণ্যটির দাম বাড়ায় নাগরিকদের জীবনের ব্যয় আরেক দফা বৃদ্ধি পাবে। এতে ১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডারের গ্যাসের মূল্য গড়ে ৯০০ টাকার ওপরে পড়বে, যা এখন গড়ে ৮০০ টাকায় মিলছে। যদিও গত মাসেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারপ্রতি এলপিজির দাম ১০০ টাকা কমিয়ে ৬০০ টাকা করেছে।
এলপিজির দাম নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বাড়ান বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে দাম বৃদ্ধি করলেও বেসরকারি এলপিজি পরিবেশকরা খুচরা বিক্রেতাদের বিক্রি মূল্যের রশিদ দেন না। ফলে দাম বৃদ্ধি নিয়ে ভোক্তাদের মনে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
জানতে চাইলে ওমেরা এলপিজির প্রথান নির্বাহী শামসুল হক বলেন, বাজারে প্রতিযোগিতা বেশি হওয়ায় প্রতিটি কোম্পানি উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে এলপি গ্যাস বিক্রি করছে। এভাবে চলতে থাকলে এ খাত বসে যাবে। তাই ব্যবসায়ীরা কীভাবে টিকে থাকা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করছেন। তিনি জানান, বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে সিলিন্ডারপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাবা বেশি হলে তারা ব্রেক ইভেন্টে থাকবেন।
সেনা এলপিজির বরিশালের পরিবেশক আজিম হোসেন জানিয়েছেন, আজ শনিবার থেকে দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, এবার প্রতি সিলিন্ডারের দাম বাড়বে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। সর্বশেষ ১ জুলাই দাম বৃদ্ধির পর পরিবেশকরা ৭৫০-৭৭০ টাকা মূল্যে খুচরা বিক্রেতাদের দিচ্ছেন। সেখান থেকে ভোক্তারা কিনছেন ৮০০-৮২০ টাকায়। আজ শনিবার নতুন করে দাম বাড়লে খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তাদের কাছে প্রতি সিলিন্ডার বিক্রি করবেন ৮৯০-৯০০ টাকায়। এক প্রশ্নের জবাবে পরিবেশক আজিম বলেন, খুচরা বিক্রেতারা বিক্রয় রশিদ চায় না, তাই দেওয়াও হয় না।
এলপিজি যমুনা (বেসরকারি) কোম্পানির বরিশালের পরিবেশক মো. শাহিন বলেন, গত ৩ আগস্ট তার কোম্পানির প্রধান কার্যালয় থেকে জানিয়ে দিয়েছে যে গ্যাসের দাম বাড়বে। এটা হয়তো এ সপ্তাহেই কার্যকর হবে। তিনি বলেন, সর্বশেষ জুলাইয়ে গ্যাসের দাম সিলিন্ডারপ্রতি ৩০ টাকা বেড়েছিল। এবার ৫০ থেকে ৭০ টাকা বাড়তে পারে।
বরিশাল নগরীর ফরেস্টার বাড়িপুল এলাকার এলপি গ্যাসের খুচরা বিক্রেতা মো. মামুন জানান, পরিবেশকরা দাম বাড়ালে তাদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়। দেশে বছরে এলপিজির চাহিদা ১৫ লাখ টন। সরবরাহ হয় প্রায় ১০ লাখ টন। এর মধ্যে বছরে মাত্র ২০ হাজার টন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে সরকারি এলপিজি কোম্পানির। বাকি মার্কেট বেসরকারি এলপিজি ব্যবসায়ীদের দখলে।
আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ এবং সরকারি উৎপাদন স্বল্পতায় বেসরকারি এলপিজি ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে ব্যবসা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্নিষ্টরা। বোতলের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ওজনে কম দেওয়া এবং টুইনিং (বোতলে হাওয়া ভরা) করার অভিযোগ রয়েছে মাঠ পর্যায়ের বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগ তেমন নেই বললেই চলে। ফলে ঠকছেন গ্রাহকরা। লাভবান হচ্ছেন উৎপাদক ও মধ্যস্বত্বভোগীরা।